রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গালঃ
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান ক্যারিবীয় সমুদ্রে। এর এক প্রান্ত ছুঁয়েছে বারমুডায়, অন্য প্রান্তটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি এবং আরেকটি প্রান্ত স্পর্শ করেছে পুয়োর্তরিকোর সাজ জুয়ান। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের বিস্তৃতির বর্ননায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জ এবং ইশোর (Azores) পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান (San Juan), পর্তু রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপূঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাঁদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস ( ইতালীয় নাবিক ও ঔপনিবেশিক)সর্বপ্রথম এই ত্রিভূজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনারকথাও বর্ণনা করেছেন। (সূত্রঃ১১ইঅক্টোবর, ১৪৯২ এ লিখিত কলম্বাসের নোটবুক) এই অঞ্ছলে গঠিত বিভিন্ন দুর্ঘটনা বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিমান এবং জাহাজের মধ্যে উল্লেখ করার মতো একটি হলো ফ্লাইট নাইনটিন ( ইউ এস নেভী-র পাঁচটি ‘টি বি এম অ্যাভেন্জার’ বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়)।। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান (American Legion) ম্যগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- We don't know where we are, the water is green, no white। এর অর্থ হল "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"!এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়।ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১৪৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অন্যান্য জিনিসের মতো এর বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বেশিরভাগ হারিয়ে যাওয়া ঘটনাগুলো ঘটেছে দক্ষিন সীমানায় বাহামা দীপপুঞ্জ ঘিরে এবং ফ্লোরিডা উপকূলের আশেপাশে।বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অভ্যন্তরে আছে শ তিনেক কোরাল দ্বীপ। এর বেশিরভাগই জনবসতিহীন।আর এর মাঝে একটি দ্বীপই হচ্ছে বারমুডা।বারমুডা দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ১৫৬৫ সালে। এক দুঃসাহসিক নাবিক জুয়ান ডি বারমুডেজ এই দ্বীপটি আবিস্কার করেন। তার নামানুসারেই পরে দ্বীপটির নামকরন করা হয়।এই অঞ্চলের রহস্যময়তারএকটি দিক হলো, কোনো জাহাজ একবার এই এলাকায় প্রবেশ করার কিছু সময়ের মধ্যে তা বেতার তরঙ্গ পাঠাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না।মার্কিন নেভির সুত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এই এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০ টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে।১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তোলে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের আরো সব বিতর্কের মধ্যে একটি হলো, ফ্লাইং সসারের আগমন। অনেকে মনে করেন, এই এলাকাটি উন্নত গ্রহের প্রানিদের পৃথিবীতে অবতারণের স্থান। এ ধারনার কারন হলো, এই এলাকায় চলাচলকারী কিছু নাবিক নাকি আকাশে উড়ন্ত সসারের আনাগোনা দেখতে পান। তবে, এটি নিছক কল্পনা হিসেবে ধরা হয়। কারন, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
No comments:
Post a Comment